সুন্দর জীবন গঠনের ৯ সূত্র

সুন্দর জীবন গঠনের ৯ সূত্র
জীবন কী? এই জীবন কীভাবে যাপন করতে হয়, কীভাবে একটি সুন্দর জীবন গড়ে তোলা যায় এসব দার্শনিক প্রশ্ন। শত শত বছর ধরে এই প্রশ্নগুলো মানুষকে তাড়া করে ফিরছে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন দর্শন ও জীবনব্যবস্থা। একটি সুন্দর জীবন কীভাবে গঠন করা যায় এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক যেমন শেষ হয়নি, তেমনি নেই সর্বজন স্বীকৃত কোনো পদ্ধতিও। যুগে যুগে দার্শনিক, ধর্মবেত্তা, মহাপুরুষরা দিয়েছেন কিছু স্বর্ণসূত্র। এমন ৯ সূত্র নিয়ে লিখেছেন এনাম-উজ-জামান
অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা নয়
প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র। প্রতিটি মানুষের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও পরিস্থিতি ভিন্ন। এ কারণে একেকজনের বাধাবিঘ্ন এবং তা অতিক্রমের ক্ষমতাও ভিন্ন। একজনের সাফল্য, অর্জন, কীর্তির সঙ্গে তাই আরেকজনের অর্জনের তুলনা করা যায় না, অনুচিতও বটে। কিন্তু আমরা আকছার এই কাজটি করি। অন্যের উন্নতি দেখে ঈর্ষান্বিত হই। বাড়াই নিজের অন্তর্জ্বালা। এর থেকে সৃষ্টি সমস্ত দুঃখের। যদি নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা থেকে বিরত রাখতে পারি, তাহলে মানসিক কষ্টের সিংহভাগই আমরা দূর করতে পারব।
সবার কাছ থেকেই শেখার চেষ্টা
প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনো বিষয়ে অভিজ্ঞ, কোনো না কোনো বিষয়ে স্বতন্ত্র অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করেছেন। তার ফলেই তিনি পৃথিবীতে নিজের জীবনযাপন করতে পারছেন। তাই শেখার আছে সবার কাছ থেকেই। কবি সুনির্মল বসু বলেছেন, ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র’। যদি সত্যিই আপনি আপনার কাছ থেকে শিখতে পারেন, তাহলে আপনার জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর। সবার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা থাকলে সবার প্রতি প্রকাশ পাবে শ্রদ্ধাভাব। এর ফলে সবার সঙ্গে স্থাপিত হবে সুসম্পর্ক। তা ছাড়া শেখা বিষয়টি কাজে লাগিয়ে উন্নতি করা সম্ভব পার্থিব জীবনেও।
দুটি কান ও একটি মুখ থাকার কারণ তো আছেই
মানুষের দুঃখের কারণ হিসেবে অনেক মহাপুরুষই চিহ্নিত করেছেন মুখ নিঃসৃত কথার রূঢ় প্রকাশকে। বলা হয়ে থাকে, ধনুক থেকে নিঃসৃত তীর আর মুখ থেকে নিঃসৃত কথা যেহেতু ফিরিয়ে আনা যায় না, তাই ভেবেচিন্তে আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করা উচিত। অ*স্ত্রের আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত সেরে যায়, কথার আঘাতে সৃষ্ট ক্ষত মানুষ কখনোই ভুলতে পারে না। সাধকরা এজন্য বলেন, মানুষের দুটি কান ও একটি মুখ আছে, তার নিশ্চয়ই একটি কারণ আছে। আর সে কারণটি হলো, শুনতে হবে বেশি আর বলতে হবে এর অর্ধেক।
মানুষের অন্তর্নিহিত ভালো আবিষ্কারের চেষ্টা
দোষেগুণে মানুষ। কোনো মানুষের সমস্তটা খারাপ আবার কোনো মানুষের সমস্তটা ভালো এমন হতে পারে না। তাই চাইলেই যেকোনো মানুষের মাঝে যেমন খারাপ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব, তেমনি সব মানুষের মধ্যেই ভালো বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আমরা একজন মানুষের মধ্যে যা খুঁজে পাই, অজান্তেই সেই বৈশিষ্ট্যও নিজের মধ্যে ধারণ করি। তাই যদি আমরা প্রতিটি মানুষের মধ্যে ভালো যে বৈশিষ্ট্য আছে, তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা নিজেরাও সেই গুণগুলো আয়ত্ত করতে পারব এবং আলোকিত সুন্দর জীবন গঠন করতে পারব। এই চর্চার নামই হলো ইতিবাচকতার চর্চা।
সবাইকে নিতে হবে আপন করে
আমরা সবাই পৃথিবী নামক সংসারের সদস্য। সবাই একই পরিবারের সদস্য। বিভেদের চর্চা আমাদের একাকী করে দেয়। কিন্তু সবাইকে যদি আপন করে নেওয়ার চেষ্টা থাকে, তাহলে মনের ভেতর যে আত্মবিশ্বাসের জন্ম নেবে, তা-ই অবারিত সুখের উৎস। তাই বিভেদ নয়, সবাইকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কাল্পনিক সংকটকে ‘না’
অতিচিন্তা আমাদের স্নায়ুকে ক্লান্ত, অবসন্ন করে তোলে। অনেকেই যা ঘটেনি তাও কল্পনা করে আতঙ্কিত হয়ে যান। এর অতিচিন্তা আমাদের সুখের পথে এক বাধা। তাই সংকট কল্পনা করে উদ্বিগ্ন হওয়ার এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
ক্রমোন্নতির চেষ্টা করুন, ফল না
প্রতিযোগিতা হতে হবে নিজের সঙ্গে, অন্যের সঙ্গে নয়। সব সময় চেষ্টা করতে হবে, আজকের দিনটি যেন গতকালের থেকে উত্তম হয়। এই ক্রমাগত উন্নতিই আপনাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে। কিন্তু নির্দিষ্ট ফলের প্রত্যাশায় কাজ করলে তা আপনার মধ্যে বাড়িয়ে দেবে দুশ্চিন্তা ও হতাশা।
সফলতার আপনার সংজ্ঞা কোনটি
সমাজে সফলতার যে সংজ্ঞা প্রচলিত আছে, সেটি আমাদের এক ধরনের প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেয়। আর যেকোনো প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে পারে মাত্র একজন। তাই এ প্রতিযোগিতা মনোভাব আমাদের অসুস্থ করে দেয়। আপনার কাছে সফলতা কী, তা নির্ধারণ করুন এবং অর্জনের জন্য চেষ্টা করুন।
নিজেকে প্রশ্ন করুন ‘এটি কি প্রয়োজনীয়?’
আমরা অধিকাংশ সময় অন্যের অনুরোধ বা সমাজে লোকে কী বলবে ভেবে কাজ করি, যা আমাদের মানসিক শান্তির জন্য একটি হুমকি। তাই কোনো কাজ করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন এটি কি প্রয়োজনীয়? এটি করার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি? তাহলেই সামাজিক চাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top

Get your Free Trial Today