একজন মনীষী বলে গেছেন, বলো কম, শোনো বেশি। কিন্তু অনেকটা মজ্জাগতভাবে আমরা অনেকেই এর উল্টোটাতেই বিশ্বাসী। নিজে যা জানি, সেটাই শ্রেষ্ঠ জাহির করার জন্য অনর্গলভাবে কথা বলে যাই। অথচ একবারও ভাবি না তাদের কথাগুলো কতটুকু যৌক্তিক কিংবা বিজ্ঞানসম্মত। আসলে এভাবে অনর্গল কথা বললে কখনোই নিজের স্মার্টনেস কিংবা বুদ্ধিমত্তা কোনোটিই প্রকাশ পায় না। কারও মনোযোগ আকর্ষণ করতে হলে ভালোভাবে গুছিয়ে কথা বলার কায়দা রপ্ত করতে হবে। আর এই গুছিয়ে কথা বলার কৌশল আয়ত্ত করতে হলে মনোযোগী শ্রোতা হওয়া চাই। কারণ অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা-চেতনা উন্নত হয়। এ ছাড়া শিক্ষাজীবনে আমাদের অনেক কিছু মনে রাখতে হয়। কারণ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য চাই বেশি তথ্য মনে রাখা। যে যত বেশি তথ্য পরীক্ষার খাতায় উপস্থাপন করতে পারবে, সে তত বেশি ভালো ফলাফল করতে পারবে। কীভাবে আমরা লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারব—এবার তা নিয়ে একটু অলোকপাত করা যাক।
বিতৃষ্ণাকে জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। মনে কোনো বিষয়ে বিতৃষ্ণা জন্ম নিলে তখন আর কোনো বিষয়েই মনোযোগ দেওয়া যায় না। যে বিষয়টি পড়া হচ্ছে, তা অবশ্যই ভালো লাগতে হবে। তবেই মনোযোগ বাড়বে।
তোমার মনের ভেতর যদি কোনো বেদনা, ক্ষোভ, লিপ্সা, ঈর্ষা, ইত্যাদি লুকিয়ে থাকে, তবে এমনিতেই তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে। ফলে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাবে। শুধু লেখাপড়া কেন, মনের ভেতর এ রকম কুপ্রবৃত্তিগুলো যদি বাসা বাঁধে, তবে কোনো কাজেই তখন আর মন বসে না।
তুমি যদি বলতে আগ্রহী হও, তাহলে তোমাকে শুনতেও হবে। যদি তুমি সত্যি সত্যিই জানতে চাও, শিখতে চাও, তবে তোমাকে শিক্ষকের প্রতিটি ক্লাস মন দিয়ে শুনতে হবে।
কখনো নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা ভাববে না, নিজেকে কারও চেয়ে ছোট ভেবে হীনম্মন্যতায় ভোগা ঠিক নয়। সব সময় নিজের ওপর বিশ্বাস রাখবে। অন্যের সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে। নিজের ওপর বিরক্ত হলে চলবে না, নিজেকে উজ্জীবিত রাখ সব সময়; যা তোমার আগ্রহ ও মনোযোগের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুণ।
অন্য কোনো বিষয়ে মন আচ্ছন্ন থাকলে লেখাপড়ায় মনোযোগ দেওয়া যায় না। কাজেই সব সময় অন্য চিন্তা মাথা থেকে দূরে রাখতে হবে।
যে সময়টাতে তোমার পড়তে ভালো লাগে, ওই সময়ে গভীর মন দিয়ে পড়ো। পড়ার জন্য নিজের পছন্দের সময়টাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে।
পড়াশোনার জন্য চাই একটি সুস্থ-সুন্দর পরিবেশ। কারণ প্রতিকূল পরিবেশে লেখাপড়ায় মন দেওয়া যায় না।
যেসব বিষয় পড়তে ভালো লাগে, সেগুলো আনন্দের সঙ্গে পড়ো। আর যেগুলো ভালো লাগে না, তা ভালো লাগাতে চেষ্টা করো।
মনোযোগ বাড়ানোর জন্য কিন্তু বসার জায়গাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বসার স্থানটি যদি আরামদায়ক না হয়, তবে কিন্তু পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া কষ্টকর হবে। শিক্ষক ক্লাসে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন, এমন সময় তোমার দৃষ্টি আকর্ষিত হলো রাস্তার মিছিলের দিকে অথবা স্কুলের মাঠে অন্য ছাত্রদের খেলাধুলার দিকে তখন কিন্তু শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা হয় না। তাই এসব ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে।
বিরক্তিকর শব্দ শুনলে বা বিরক্তিকর কিছু দেখলে অনেকে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না। যতটা সম্ভব এসব শব্দ বা দৃশ্য এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
যেসব কথা তোমার মনে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, সেই সব কথায় উত্তেজিত হওয়া মোটেও সমীচীন নয়। এরূপ ক্ষেত্রে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। স্বাভাবিক থাকতে হবে।
শারীরিক অসুস্থতা থাকলে লেখাপড়ায় মনোযোগ দেওয়া যায় না, তাই স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে হবে। শরীর সুস্থ থাকলে যেকোনো কাজে আনন্দ পাওয়া যায়।
সর্বোপরি, লেখাপড়াকে গভীরভাবে ভালোবাসতে হবে। তবেই না লেখাপড়ায় মনোযোগ থাকবে।গবেষণায় দেখা গেছে, মনোযোগ দিয়ে শোনা, দেখা, অনুশীলন এবং অধ্যয়নের মাধ্যমে কোনো বিষয়ের ৯৫ শতাংশ মনে রাখা সম্ভব। সুতরাং মনোযোগ দিয়ে শোনা, দেখা, হাতে-কলমে কাজ করার মাধ্যমে অনুশীলন, অর্থাৎ নিজে ব্যবহারিকভাবে কাজ করে এবং অধ্যয়নের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে মনে রাখা যেতে পারে। জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এর অন্য কোনো বিকল্প নেই।