পড়াশোনায় সেরা হওয়ার ৩ তরিকা!

বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের থিওরি অনুযায়ী পড়াশোনায় সেরা হওয়ার ৩ তরিকা!
আলবার্ট আইনস্টাইন যেন কৌতূহল এবং বুদ্ধির আরেক নাম। সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম এই বিজ্ঞানীর আপেক্ষিক তত্ত্ব ও অন্যান্য আবিষ্কার ছাড়াও তাঁর উক্তিগুলো প্রচলিত রয়েছে সর্বত্র। সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক উক্তিতে লুকিয়ে আছে মস্তিষ্ককে শাণিত করার অনেক উপায়! চলো, আজ তাঁর তিনটি উক্তি থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা পড়াশোনায় কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা দেখে নিই!
‘কল্পনা জ্ঞানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞান কেবল আমরা যা জানি এবং বুঝি তাতেই সীমাবদ্ধ, অন্যদিকে কল্পনা সমগ্র বিশ্বের যা যা বোঝা এবং জানা দরকার, তাকেও আবর্তন করে।’
তোমরা জেনে অবাক হবে যে আইনস্টাইনের অধিকাংশ আবিষ্কারের শুরুটাই হয়েছে একেকটা কিংবদন্তিতুল্য থট এক্সপেরিমেন্ট বা কাল্পনিক পরীক্ষা দিয়ে। একটি লিফট যদি ওপর থেকে মুক্তভাবে পড়ে, তবে লিফটে দাঁড়ানো ব্যক্তি কোনো ওজন অনুভব করবে না, তা তিনি একটি থট এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমেই প্রথম তুলে ধরেন। আইনস্টাইনের আরেকটি বিখ্যাত থট এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে তাঁর ছেলেবেলায় আলোকরশ্মির পেছনে ছুটে বেড়ানো। একটু ভেবে দেখো তো বিশ্বের কোন গবেষণাগারে তুমি নিমেষেই এসব পরীক্ষা করে ফেলতে পারবে?
তা ছাড়া আলোকরশ্মির সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করা আদৌ কি সম্ভব? অথচ তুমি কল্পনায় করে নিতে পারো নিজের ইচ্ছামতো পরীক্ষা, সেখানে নেই কোনো বাধা, নেই কোনো খরচের হিসাব। অসম্ভব বলেও নেই কোনো কিছু! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক যেমন তাঁর গানে বলেছেন, ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে!’ তাই আমরা যখন বই পড়ি তখন কেবল মুখস্থ না করে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে কল্পনার রাজ্যে। সেখানে চাই অখণ্ড মনোযোগ এবং সীমাহীন কল্পনা। উদাহরণস্বরূপ তুমি যখন মানুষের হৃদপিণ্ড নিয়ে পড়বে, তখন কীভাবে অলিন্দ-নিলয়ের খেলায় হৃৎপিণ্ডটি সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে তা বইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়ে কল্পনায় ধারণ করার চেষ্টা করবে।
মানসপটে তা আরও দৃঢ়ভাবে ধারণ করার জন্য তার ভিডিও দেখে নিতে পারো ইউটিউবে। রক্ত সঞ্চালনের সময় হৃৎপিণ্ডে যে লাব-ডাব শব্দ হয় তা তোমার কল্পনায় স্পষ্ট শোনার চেষ্টা করবে। এভাবে সব ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে রং, আকার, আকৃতি, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ কল্পনা করে মনোছবি দেখার অভ্যাস করলে সব পড়া তোমার মনে গেঁথে যাবে। ইমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, পাঠক যখন কোনো বই পড়ে, তখন সে বইয়ের নায়কের চরিত্রে নিবিড়ভাবে আবিষ্ট হয়ে পড়ে। ধরো, সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা খুব বীরত্বের সঙ্গে লাফ দিয়ে একটি গাড়িতে উঠল, তখন পাঠকের মস্তিষ্কের বাস্তবে লাফ দেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অংশটি কাজ করে ওঠে। সুতরাং বই পড়ে কল্পনা করলে সত্যি সত্যি কোনো একটা কিছু করলে তোমার মস্তিষ্কের যে অংশগুলো কাজ করার কথা, সেগুলো সজাগ হয়ে ওঠে। আমেরিকান শিক্ষাবিদ এডগার ডেইল তাঁর এক বিখ্যাত গবেষণায় খুঁজে পান যে আমরা কোনো একটা কিছুর ৭০ শতাংশ মনে রাখতে পারি যদি আমরা সেটা দেখি এবং শুনি। আর যত বেশি ইন্দ্রিয়কে সক্রিয় করতে পারি, মনে রাখার প্রবণতা বেড়ে যায় তত বেশি!
সুতরাং পড়ার সময় কল্পনায় যদি তুমি ইন্দ্রিয়গুলোকে সক্রিয় করতে পারো, তবে তা হবে সত্যিকারের দেখা, শোনা, স্বাদ নেওয়া, স্পর্শ করার কাছাকাছি এবং মনেও থাকবে বেশি। এ ছাড়া তুমি কোনো তালিকা মুখস্থ করতে গেলে একটির সঙ্গে আরেকটির মধ্যে সম্পর্ক তৈরির জন্য তোমার কল্পনার রাজ্যে গল্প ফেদে বসবে। যেমন ধরো একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান বইয়ে বলা আছে ‘ভূনিম্নস্থ অতি সংক্ষিপ্ত রূপান্তরিত কাণ্ডকে বাল্ব (Bulb) বলে। বাল্বের উদাহরণ হলো পেঁয়াজ, রসুন।’
এটা তুমি সরাসরি মুখস্থ না করে একে তুমি মজার একটা গল্পের মাধ্যমে তোমার মস্তিষ্কে একটা স্থায়ী স্থান দিয়ে দিতে পারো! এ জন্য তুমি কল্পনায় ধরে নাও পেঁয়াজ একটা সুন্দর লাল বাতি আর রসুন একটা সাদা বাতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কল্পনা করো যে তারা মাটির নিচে হঠাৎ জ্বলজ্বল করে ওঠে উঠেছে। এই এক গল্পেই বাল্বের সংজ্ঞা আর উদাহরণ কিন্তু তোমার মনে গেঁথে গেছে। তাই বইয়ের যেকোনো বিষয় পড়ার সময় তুমি পুরোপুরি নিমজ্জিত হয়ে পড়বে এবং কল্পনার ডালপালা বিস্তার করে দেবে। যত উদ্ভট এবং মজার গল্প বানাতে পারবে, মস্তিষ্কও গল্পটাকে তত নিখুঁতভাবে ধারণ করতে পারবে।
‘জীবন বাইসাইকেলের মতো। ভারসাম্য রাখতে চাইলে তোমাকে অবশ্যই তা চালিয়ে যেতে হবে!’
আমরা পড়াশোনা করার সময় অনেক ক্ষেত্রেই মনে করি আজকে সব পড়া শেষ করে ফেলব এবং সেই একদিন ঠিকঠাক পড়াশোনা করে পরের দিনগুলোয় আর বইয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকে না। এটি কিন্তু মোটেও করা যাবে না; বরং তোমাকে অধ্যবসায়ের সঙ্গে পড়তে হবে নিয়মিত। ড্যারেন হার্ডির বিখ্যাত বই ‘দ্য কম্পাউন্ড ইফেক্ট’-এ ঠিক এ বিষয়টিই বড় পরিসরে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তুমি যদি প্রতিদিন দশ পাতা করেও একটা বই পড়ো আর বইটিতে তিন শ পাতা থাকে, তবে তা শেষ হবে মাত্র ত্রিশ দিনে। তাই মোটা মোটা বই কিংবা বিশাল বিশাল কাজ দেখে মোটেও ভয় পাওয়া যাবে না; বরং সেটাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে প্রতিদিন কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
‘খেলায় অংশগ্রহণের আগে তার নিয়মগুলো জেনে নাও!’
এটি আইনস্টাইনের একটি অন্যতম সেরা উক্তি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কথাটি সত্য। তুমি অনেক দ্রুত দৌড়াতে পারলেও দৌড় প্রতিযোগিতার নিয়ম না জানলে তোমার পক্ষে জেতা অসম্ভব। ঠিক তেমনি তুমি যদি প্রশ্নের ধরন না বোঝো, কোন প্রশ্নের উত্তর কীভাবে করা উচিত, কতটুকু করা উচিত, প্রতিটি প্রশ্নের জন্য কতটুকু সময় বরাদ্দ রাখা উচিত; সে-সম্পর্কে তুমি যদি ওয়াকিবহাল না থাকো। তবে যত ভালো শিক্ষার্থীই হও না কেন, প্রশ্নপত্রের সব উত্তর জানা থাকলেও তুমি কিন্তু পূর্ণ সন্তুষ্টির সঙ্গে তোমার পরীক্ষা দিতে পারবে না! পরীক্ষাও একটি মজার খেলা। তাই এ খেলায় অংশগ্রহণের জন্য তোমাকে নিয়মগুলো পাই টু পাই অবগত হয়েই তবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top

Get your Free Trial Today