পরিকল্পনা ও পড়াশোনা
খুব বেশি পড়ুয়া যারা, তারা বাদে বাকিদের পড়ার প্রতি অলসতা কাজ করে। কিন্তু একটা ভালো রেজাল্ট আর ভালো চাকরির জন্যে তারা জোর করেই পড়তে বসেন। আবার অনেকেই বিপুল আগ্রহ নিয়ে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, মনের মধ্যে নিরানন্দ নিয়ে কোনোমতে পড়াশোনাটা চালিয়ে যান। এক সময় অলসতাও ভর করে। এই একঘেয়েমি কাটাতে বিসিএসের প্রস্তুতি পরিকল্পনা বৈচিত্র্যময় করে তুলতে হবে। চাকরি লাভের এই মহাযজ্ঞে ভেতরের প্রবল উদ্দীপনা ছাড়া আদৌ সফলতা লাভ করা যায় না।
আপাতদৃষ্টিতে চাকরির পড়াশোনাটা মুখস্থনির্ভর মনে হলেও সৃজনশীল জ্ঞানসম্পন্ন প্রার্থীরাই সবার আগে চাকরি পান। সৃজনশীলতা এমনিই জন্মায় না, এর জন্য দীর্ঘদিনের অভ্যাস ও সাধনার প্রয়োজন। পড়াশোনার প্রতি অনুরাগ না থাকলে দীর্ঘদিন পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা যায় না।
পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ এবং ক্রমবর্ধমান মনোযোগই একজন চাকরি প্রত্যাশীকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। অর্থাৎ চাকরিপ্রত্যাশীদের এমন একটি স্টাডি প্ল্যান থাকা প্রয়োজন, যা অনুসরণ করলে দিন দিন পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে, আবার সেই সঙ্গে অর্জিত জ্ঞানের মাত্রাও সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকবে। সময় ধরে পড়াশোনা করার চেয়ে টপিক বা বিষয় ধরে পড়াশোনা করলেই বেশি উপভোগ্য হবে। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সমন্বয়ের চেয়ে পড়ার মূল বিষয়বস্তু বা টপিকের সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করে নিলেই পড়ায় মনোযোগ বাড়বে। পড়াশোনায় আসলে মনোযোগটাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ, সময়টা নয়।
শুরুর দিকে অপেক্ষাকৃত সহজ এবং পরিচিত টপিক নিয়ে পড়তে বসুন। মুখস্থ না করে বরং জানার আগ্রহ নিয়ে পড়লে পড়ায় ধীরে ধীরে মনোযোগ বাড়বে। সেই সঙ্গে যে কোনো বিষয় পড়ার সময় একটা অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়া উচিত। কঠিন বিষয়গুলো আয়ত্তে নেওয়ার জন্য আলাদা পরিকল্পনা নিতে হবে। যেমন- কেউ হয়তো ইংরেজি ভালো পারেন, কিন্তু গণিতে কাঁচা। তার উচিত হবে পুরো গণিত বিষয়টিকে অনেকগুলো ছোট সেগমেন্টে ভাগ করে নেওয়া। কঠিন একটি চ্যাপ্টারকে পাঁচ-ছয়টি ভাগে ভাগ করে ফেলা যেতে পারে। প্রতিটি ভাগের জন্য আলাদা করে সময় বরাদ্দ রেখে ভালো করে শিখে নিতে হবে। কোনোভাবেই একটি সেগমেন্ট না শিখে পরের সেগমেন্টে যাওয়া উচিত হবে না। এভাবে নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে গেলে একসময় পুরো সিলেবাসটিই আয়ত্তে চলে আসবে।
একই দিনে একাধিক বিষয় পড়া যাবে কি না এটি প্রার্থীর অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। এক দিনে একাধিক বিষয়ের একাধিক টপিক পড়া যেতেই পারে। তবে একটি টপিক শেষ না করেই অন্য টপিকে না যাওয়া ভালো। এমনভাবে টপিক গুছিয়ে নিতে হবে, যেন দু-এক দিনের মধ্যে একটি টপিক পড়ে শেষ করা যায়। নিয়মিত রিভিশন দেওয়ার ব্যবস্থাও একটি কার্যকর স্টাডি প্ল্যানের অপরিহার্য অংশ। নিয়মিত বিরতিতে পঠিত বিষয়গুলো রিভাইস না করলে তা স্মৃতি থেকে লোপ পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঠিক কতটুকু সময় পর পর রিভিশন বা পুরনো পড়াগুলো রিপিট করা উচিত, এটি প্রার্থীর স্মরণশক্তির ওপর নির্ভর করবে। যাদের স্মরণশক্তি অপেক্ষাকৃত দুর্বল, তাদের দিনের শুরুর ভাগের পড়া দিনের শেষ ভাগে এসে একবার রিভিশন করে নিতে হবে। পড়া যত অল্পই শেখা হোক, যে কোনো মূল্যে সেটি মাথায় ধরে রাখা চাই। প্রয়োজনে স্মরণশক্তি বাড়াতে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। পড়া শেষ হলে লিখতে পারেন, তাতে পড়া ভালো করে মুখস্থ হবে এবং দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
ইংরেজি ও বাংলার ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানো চাকরিপ্রার্থীদের জন্য অপরিহার্য। প্রতিদিনের পড়াশোনায় কিছু ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং, ভালো কোনো সাহিত্যের কয়েক পাতা পড়া, পত্রপত্রিকা পড়া- ইত্যাদি অভ্যাসগুলো রাখতে হবে। যখনই পড়াশোনায় বিরক্তি আসবে, তখনই পত্রিকা বা সাহিত্যের পাতা থেকে কিছু না কিছু পড়ে আগ্রহ বাড়াতে হবে। কোনোক্রমেই পড়ার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো উচিত হবে না। এমনকি টক শো, টিভির খবর কিংবা তথ্যচিত্র দেখে জ্ঞানার্জনের আগ্রহ জিইয়ে রাখতে হবে। যারা আলোচনা করে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তারা গ্রুপ স্টাডি অপশনটিও রাখতে পারেন। পড়াশোনায় কোনোভাবেই গ্যাপ রাখা যাবে না। প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়তেই হবে, অল্প হোক কিংবা বেশি।